প্রকাশিত: Sun, Jan 15, 2023 2:39 PM
আপডেট: Sat, May 10, 2025 8:15 PM

আগামী দু’বছর বাংলাদেশিসহ কোনো বিদেশি কানাডায় বাসাবাড়ি কিনতে পারবে না, দেশটি কেন নিলো এই সিদ্ধান্ত?

মঞ্জুরে খোদা টরিক

কানাডা সরকার এ বছর জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে দু’বছর বিদেশিদের জন্য কানাডায় বাড়ি-ঘর কেনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তার মানে আগামী দুই বছর বাংলাদেশিসহ কোনো বিদেশি এখানে জায়গা-জমি কিনতে পারবে না। কানাডা সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণ হচ্ছে, গত কয়েক বছরে কানাডায় বাসা-বাড়ির দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার মনে করছে, বিদেশ থেকে ধনী ব্যক্তিরা টাকা নিয়ে এসে এখানে বাসাবাড়ি সম্পদ করছে, আর সে কারণেই এগুলোর দাম বাড়ছে। বাড়ির শুধু দাম বাড়ছেই না, সাথে সাথে বাসা ভাড়াও অত্যাধিক হারে বাড়ছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগে থেকেই মানে গতবছর থেকেই কানাডায় বাসা-বাড়ির দাম না বেড়ে বরং কমেছে এবং কমতির দিকে। এই অবস্থা কতদিন থাকবে সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা দ্বিধাগ্রস্ত হলেও এ অবস্থা যে আপাত ফল দিতে শুরু করেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কানাডা সরকারকে বাংলাদেশসহ বিদেশ থেকে অবৈধ অর্থ আসা বন্ধ করতে হবে।

আমরা বৈধ অর্থ ও বৈধ বিনিয়োগের বিরোধী নয় বরং পক্ষে, কিন্তু তা কোনো দেশের স্বার্থের ক্ষতি করে নয়। তবে অবৈধ পাচারকৃত অর্থ আসা বন্ধ করতে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী আইনি কাঠামো তৈরি ও আরোপ করতে হবে। যাতে করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বাংলাদেশ সরকার ও নীতি নির্ধারকদের প্রতি আহ্বান/অনুরোধ বিদেশে যারা তাদের বৈধ অর্খ-সম্পদ নিয়ে যেতে চান, বিনিয়োগ করতে চান সে ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত আইন তৈরি করে তাদের সহযোগিতা করবেন। মানুষ যখন তার/তাদের বৈধ সম্পদ (ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গের অর্জিত ও উত্তরাধিকাসূত্রে প্রাপ্ত) স্থানান্তর করতে অপারগ হয় তখন সে অবৈধ পথ অবলম্বন করেন। প্রবাসী বা বিদেশে বিনিয়োগকারীরা যেন নির্ধারিত পরিমাণ কর দিয়ে তারা তাদের অর্থ-সম্পদ বিদেশে নিয়ে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে অবৈধ অর্থ (কালোটাকা), দুর্নীতির অর্থ বৈধ করতে যদি সরকার নানা সুযোগ দিতে পারে তাহলে এই বৈধ অর্থের ক্ষেত্রে কেন দেওয়া হবো না? এতে সরকার উচ্চহারে কর পেতে পারে দেশের অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হতে পারে। হুন্ডি বা অবৈধভাবে অর্থ বিদেশে নিয়ে গেলে সরকারের কোনো লাভ হয় না বরং সরকারের একটি অংশের অবৈধ উপার্জনের পথ তৈরি হয়।

বর্তমানে একজন ব্যক্তি বছরে ঘোষণা ছাড়া ১০ হাজার এবং অনুমতি নিয়ে ১২ হাজার ইউএস ডলার পর্যন্ত নিতে পারেন। কিন্তু মানুষ চিকিৎসা-ভ্রমণের জন্য পরিবার নিয়ে যখন বিদেশে যায় তখন নিশ্চয়ই এর অনেক অধিক অর্থ নিয়ে যান। সে অর্থ নিশ্চয়ই বৈধ পথে নিয়ে যান না। তাকে দুর্নীতির আশ্রয় নিতে হয়। সে জন্যই সরকারের প্রচলিত আইন পরিবর্তন ও সংস্কার প্রয়োজন। আমি তাদের কথা বলছি না, যারা বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করে, ধ্বংস করে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা/ডলার বিনিয়োগ করেছেন। এক্ষেত্রে আজো আমরা সরকারের কোনো বক্তব্য আজও জানি না। এ ধরনের যতো সংবাদ আজ অবধি প্রকাশিত হয়েছে সে বিষয়েও আমরা সরকারের কোন বক্তব্য পাইনি। কানাডা সরকার তার দেশের নাগরিকদের স্বার্থ-সামর্থ্য ও ক্রয় ক্ষমতার কথা চিন্তা করেই এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বংলাদেশ সরকারকেও দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার কথা ভেবে ও দুর্নীতি-অর্থপাচার রোধে কার্যকর আইন করতে হবে। প্রয়োজনে কানাডা ও বাংলাদেশ উভয় দেশকে স্ব স্ব স্বার্থে এ বিষয়ে কূটনৈতিক ও আইনি সম্পর্ক ও বোঝাপড়া গড়ে তুলতে হবে।  লেখক: সংগঠনক, লুটেরা বিরোধী মঞ্চ, কানাডা